banner
lefthomeaboutpastarchiveright

প্রসঙ্গ ফ্যাসিবাদ

জিতেন নন্দী

ফ্যাসিবাদ নিয়ে আলোচনা বেশ গতিময় হয়ে উঠেছে। দিল্লিতে সরকারে আসার পর এবং পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল বিরোধী শক্তি হিসেবে বিজেপি জনমনে কিছুটা মান্যতা পাওয়ার পর যেন আলোচনা বেশি বেশি হচ্ছে। কিছু মঞ্চ ইত্যাদিও গড়ে উঠেছে। আমাদের বুদ্ধিজীবী মহলে কোনো বিষয়ে আলোচনা উঠলেই তার সংজ্ঞা, ইতিহাস, ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত, জয়-পরাজয় ইত্যাদি নিয়ে একটা বুদ্ধিচর্চার বাতাবরণ তৈরি হয়। আমার নিজেরও এভাবে আঁতিপাঁতি করে দেখার বিষয়টা ভালোই লাগত। আজকাল তেমন আর লাগে না। ইদানীং চারপাশের কিছু ঘটনা অন্যভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। কেমন যেন মনে হচ্ছে, এইসব চর্চার মধ্যেও একটা প্রবণতা রয়েছে, সেটা হল কর্মকে এড়িয়ে যাওয়া, ধূসর বাস্তবের মুখোমুখি না হওয়া।

একজন বুদ্ধিজীবী ফ্যাসিবাদ নিয়ে বলতে গিয়ে বিস্তারে লিখেছেন ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের কথা। এইভাবে দেখা নিয়ে আমার বেশ আপত্তি। কেন? একটু বিশদে দেখা যাক।

১৯৯২ সালে যখন বাবরি মসজিদ ভাঙা হল, আমরা থাকতাম মেটিয়াবুরুজের বাঁধাবটতলায়। খবর এল যে কাছেই ফতেপুর থেকে যারা অযোধ্যায় গিয়েছিল, তাদের মধ্যে একটি ছেলে নাকি ওই সৌধের চূড়ায় উঠেছিল, সে মারা গেছে। একদিকে আমাদের হিন্দু পাড়াগুলোতে তার প্রতি সমবেদনা; অন্যদিকে মুসলমান পাড়ায় পাড়ায় যুবকদের মধ্যে দারুণ ক্ষোভ এবং বয়স্ক সকলের বেশ মন খারাপ। পরদিন সকাল থেকেই বড়ো রাস্তার ওপর টহল দিচ্ছিল আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানেরা আর জারি হয়েছিল কার্ফু। এদিকে আমাদের পাড়ার মধ্যে বেশ উত্তেজনা। পিছনের মাঠে বোমা সংগ্রহ করে রাখা হবে, তার জন্য চাঁদা তোলা হচ্ছে। কেন? মুসলমানরা নাকি আক্রমণ করতে পারে যখন তখন, তার প্রতিরোধের প্রস্তুতি। এই প্রস্তুতি-কর্মে হাত লাগিয়েছিলেন পাড়ার বামপন্থী বলে পরিচিত কর্মীরাও। আমরা থাকতাম তিনতলার ওপরে। একজন বামকর্মী আমাদের বললেন, ‘আপনি একটু খেয়াল রাখবেন, ওপরে আছেন তো, নারায়ে তকদির আওয়াজ শুনলে আমাদের ডাক দেবেন।’ আমি একটু থতমত খেয়ে গেলাম। যাই হোক, রাতে পাড়ায় পাহারা বসল। আমি তাতে যোগ দিলাম। আমাদের বাড়িওয়ালা অজিত ঘোষও আমার পাশে বসে সারা রাত জাগলেন সামনের বাড়ির উঠোনে বসে।

আমি এই গল্পটা বললাম, কারণ সেদিন আমি দেখেছি, কীভাবে গোটা কৌম-সমাজ (কমিউনিটি) সংঘবদ্ধ হয়েছিল। হিন্দু পাড়ায় হিন্দুরা, মুসলমান পাড়ায় মুসলমানরা। আমরা চাঁদা তুলে বোমা সংগ্রহ করছি, মুসলমানরা আক্রমণ করবে এই আশঙ্কায়। একই কাণ্ড ঘটছে মুসলমান পাড়ায়, তারাও একইভাবে সংগঠিত হচ্ছে, হিন্দুদের আক্রমণের ভয়ে। অথচ আমরা পরস্পরকে চিনি। একই কারখানায় পরস্পর কাজ করে, একই স্কুলে উভয় সমাজের ছেলেমেয়েরা পড়তে যায়। আমাদের বাঁধাবটতলার মোড়ে একটা শালের দোকান আর মাংসের দোকান ভাঙা হয়েছিল, কারণ সেগুলো ছিল মুসলমানদের। এখানে কোনো হিন্দু দোকান ভাঙা পড়েনি। কাচ্চি সড়কের মুখে পাহাড়পুর রোডের ওপর ঘোষেদের মিষ্টির দোকানটাও ভাঙা হয়েছিল। অথচ তার খদ্দেররা অধিকাংশই মুসলমান। বদরতলায় হিন্দু বসতিতে কিছু ভাঙচুর হয়েছিল বলে পরে জেনেছিলাম। এও জেনেছিলাম যে ভাঙতে এসেছিল বাইরে থেকে, কিন্তু স্থানীয় মুসলমানরা বাধা দেয়নি। লিচুবাগানের দাঙ্গার ঘটনা বড়ো মিডিয়ায় খবর হয়েছিল। অনেকদিন পর্যন্ত প্রত্যক্ষদর্শী মুসলমান বন্ধুদের কাছ থেকে তার বিবরণ জানতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছি। কেউ বলতে চায়নি। আমাদের পাড়ায় একটা বাড়িতে দুজন মুসলমান যুবককে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। পাড়ার সকলে চাপ দিয়ে তাদের পাড়া থেকে বের করে দেয়। যদিও বড়তলা অঞ্চলে যে মাড়োয়ারি কাপড়ের ব্যবসায়ীরা তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে যাচ্ছিল, তাদের মুসলমান ওস্তাগররা আটকে দিয়েছিল। তাদের নিরাপত্তা আশ্বস্ত করা হয়েছিল। কারণ তাদের কাপড় ছাড়া আমাদের তল্লাটের বাঙালি মুসলমান ওস্তাগরদের দর্জিশিল্প অচল।

১৯৯২ সালের আগেও মেটিয়াবুরুজে ছোটো বড়ো বেশ কিছু দাঙ্গা হয়েছে। সেগুলো স্বল্পকালীন। দাঙ্গাহীন অবস্থাতে আমরা বেশিরভাগ সময় বাস করি। কিন্তু দাঙ্গার সামান্য স্বল্পমেয়াদি ঘটনাগুলো আমাদের কৌমজীবনে একটা দীর্ঘমেয়াদি ছাপ ফেলে যায়। হিন্দুদের একরকম, মুসলমানদের আর একরকম। আসলে আমরা জন্ম নিই একটা পরিবারে, সেই পরিবারের কৌম-পরিচয় জন্মসূত্রে আমার পরিচয় হয়ে দাঁড়ায়। বিয়ে, শ্রাদ্ধ, আচার-পরবগুলো আমার ওপর চেপে বসে। শুধু ধর্মই নয়, আমার কৌমগত সমস্ত বৈশিষ্ট্য আর চালু কৌম-সংস্কৃতি আমাকে অন্য কৌম থেকে আলাদা করে বড়ো করে তোলে। এইভাবে চলতে থাকে। এটাকেই আমরা ট্রাডিশন বা ঐতিহ্য বলে গর্ব করি।

ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের যুক্তিতে আমি বিজেপি, আরএসএস-এর ক্ষমতাকে প্রাধান্য দিতেই পারি। কারণ তারা রসদ সংগ্রহ করে দুই উৎস থেকে। একদিকে, আমাদের রাষ্ট্র, যা অনেকাংশেই হিন্দু সংস্কৃতির প্রভাবাচ্ছন্ন, তার আশকারা। অন্যদিকে আমাদের সমাজ, যা কৌম-সংকীর্ণতায় দুষ্ট, তার উসকানি। তা যদি না হত, তাহলে আমাদের পাড়ায় সিপিএম কর্মী কেন মুসলমানদের আক্রমণ রোখার জন্য বোমার চাঁদা তুলবে? কেন আমি সেই চাঁদা দেব না বলতে ভয় পাব? কীসের ভয়? কৌমের একচ্ছত্র আধিপত্যের ভয়, কৌম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ভয়। আমি নিজে ৭ ডিসেম্বর রাতে প্রতিবেশী মুসলমান পাড়ায় ঘুরেছি, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি জানতাম যে তারা মোটেই আক্রমণ করবে না। তবু আমি মুখ ফুটে সেকথা সকলকে বলতে পারিনি। যখন মুসলমানদের দোকান ভাঙা হয়েছে, সামনে দেখেও সেই দোকানদারের পরিচিত হিন্দু খদ্দের বা দোকানদাররা বাধা দেয়নি।

একই জিনিস তো আমরা দেখি রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রে। সিপিএম তৃণমূল বিজেপি সকলেই প্রার্থী দেওয়ার সময় হিন্দু এলাকায় হিন্দু, মুসলমান এলাকায় মুসলমান প্রার্থী দেয়, দরকার হলে বাইরে থেকে সেই মতো প্রার্থী উড়িয়ে নিয়ে আসা হয়, নাহলে হিন্দু বা মুসলমান কৌম-মনটাকে বুঝ দেওয়া যাবে কী করে?

ফ্যাসিবাদ কী? তা তো ক্ষমতারই এক বীভৎস যুক্তিহীন বিচারবোধহীন প্রকাশ। সে তো কেবল রাষ্ট্র বা সরকারি ক্ষমতার রথে চেপেই আসে না। রাষ্ট্র বা সরকারি ক্ষমতার রথে চেপে বসলে তার একটা প্রকাণ্ড দৃশ্যমান রূপ আমরা দেখতে পাই বটে। কিন্তু বিরোধী ক্ষমতার জোরেও তো তা কায়েম হতে পারে। যেমন হয়েছিল বাবরি মসজিদের ঘটনায়। শুধু কি তাই? সমাজের অনু-স্তরে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীও প্রতিদিন ক্ষমতাকে প্রয়োগ করে তার চারপাশে, জন্ম দেয় অনু-ফ্যাসিবাদের। সবসময় সাংগঠনিকভাবে বিজেপি বা জামাতের উপস্থিতিও দরকার পড়ে না। দরকার পড়ে কৌম-সংকীর্ণতার, কৌম-বিদ্বেষের। সেগুলো অনেকসময়ই তেমন দৃশ্যমান নয়। বিভিন্ন কৌমসম্প্রদায় পাশাপাশি থাকা, একসঙ্গে শ্রম/কাজ করা, মেলামেশা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার বিরাজমান পরিবেশের ভাঁজে ভাঁজেই অন্তর্লীন থাকে সেই সংকীর্ণতা আর জাতি বিদ্বেষ। প্রেম, বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার মধ্য দিয়ে সেই সংকীর্ণতা আর বিদ্বেষকে দূরে ঠেলে দেওয়া যায়, হয়তো সাময়িকভাবেই। যেমন, আমরা দেখি ভিন্ন জাতের ছেলেমেয়ের প্রেম আর ভালোবাসার মধ্যে। আমাদের পাড়ার একজন হিন্দু মেয়ে বছর দশেক আগে স্কুলে পড়তে পড়তে সামনের পাড়ার একজন মুসলমান ছেলেকে ভালোবাসে। মেয়েটা একদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে ছেলেটার বাড়িতে চলে গেল। ওর এক আত্মীয় আমাদের ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলার। কে যাবে ছেলেটার বাড়িতে? সেই কাউন্সিলার যেতে চান না, পাড়ায় অপ্রিয় হয়ে পড়ার ভয়। আর একজন মুসলমান মেয়ের কথা শুনেছিলাম। সে এক হিন্দু ছেলেকে ভালোবেসেছিল। কিন্তু পরিবার এবং সমাজের অত্যাচারে সে আত্মহত্যা করেছিল।

ইদানীং পরপর কয়েকটা ঘটনায় এই অনু-ফ্যাসিবাদের বীভৎসতা প্রত্যক্ষ করছি। আমাদের অঞ্চলটা মুসলমান-প্রধান। তাই যে ঘটনাগুলোর উল্লেখ করব তাতে মুসলমান কৌমের সংকীর্ণ মনোভাবের দিকটা গুরুত্ব পেয়েছে। কিন্তু এর মানে নয় যে হিন্দুদের এই সংকীর্ণতা নেই, রয়েছে। বরং তার আগ্রাসি প্রভাবও যথেষ্ট বেশি। আসলে যে ফ্যাসিবাদ আমার সামনে আকার নিচ্ছে, আমি তাকে দেখছি, অনুভব করছি প্রাত্যাহিক জীবনের মধ্যে, তাকে আমি প্রাধান্য দিচ্ছি এই আলোচনায়। তার চেয়েও বড়ো কথা, আমি তাকে মোকাবিলা করতে চাইছি প্রত্যক্ষভাবেই।

ফারুকুল ইসলাম আমাদের পাশেই বড়তলা অঞ্চলে আমার পরিচিত একজন যুবক। সে বরাবরই কিছুটা মুক্তমনা। তবে ২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলনের পর থেকে লক্ষ্য করছি যে বাংলাদেশের নাস্তিকদের সঙ্গে তার কিছুটা যোগাযোগ তৈরি হয়েছে, সম্ভবত বেশিরভাগটাই ফেসবুকের মাধ্যমে। ফেসবুক একটা খোলা হাটের মতো জায়গা। সেখানে নাস্তিকদের পেজগুলোতে মৌলবাদী এবং কৌম-বিদ্বেষীদের অবাধ যাতায়াত। পরস্পরের মধ্যে তর্ক, তার চেয়েও বেশি গালাগালি ইত্যাদি চলতে থাকে। এরকমই এক ইসলাম-বিরোধী পোস্ট একজন পাঠিয়েছিলেন ফারুকের পেজে। ফারুকের সেই পেজ ফলো করে ওরই পাড়ার একজন ছেলে সেটার প্রিন্ট আউট বার করে নেয়। তারপর ওরই বাড়ির বাসিন্দা ওর জ্যেঠতুতো ভাইয়ের জেরক্স মেশিনে সেটা লিফলেটের মতো ছাপিয়ে পাড়ায় বিলি করে দেওয়া হয়। ‘ফারুক নবীকে গাল দিয়েছে’ এই প্রচার চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ওর বাড়িতে আক্রমণ করে শত শত উন্মত্ত যুবক, তাদের মধ্যে কেউ কেউ সশস্ত্রও ছিল। আরও হাজার হাজার মানুষ নীরবে সেই ঘটনা দেখতে থাকে, কোনো প্রশ্ন নেই, রয়েছে প্রচ্ছন্ন সমর্থন। ওদের ঘর আসবাব ভাঙচুর করে ওকে রাস্তায় নামিয়ে আনা হয়। তারপর ওকে মেরেই ফেলা হত, যদি না কাছের এক মসজিদে ও আশ্রয় পেত। ও লিখিতভাবে ক্ষমা চাওয়া সত্ত্বেও রেহাই পায় না। এরপর ওকে লালবাজারে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েকদিন হাজতবাসের পর ও ছাড়া পায় বটে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ও পাড়ায় ঢুকতে পারেনি। এ নিয়ে সিপিএম, তৃণমূল কোনো দল কোনো উচ্চবাচ্য করেনি। ওর পরিচিত বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী, এমনকী ওর দাদা এবং ছোটো ভাইও নীরবে ঘটনাটাকে মেনে নিয়েছে। ও এলাকায় যে প্রগতিশীল সাহিত্য ও লিট্‌ল ম্যাগাজিন সংগঠনের সদস্য ছিল, তারা ওর নামে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ এক কথায় গোটা সমাজ ফারুকের ওপর এই আক্রমণকে পরোক্ষভাবে তো বটেই, কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ সমর্থন করেছে। এ হল এক অনু-ফ্যাসিবাদের দৃষ্টান্ত। রাষ্ট্র নয়, কোনো মৌলবাদী সংগঠন নয়, কোনো ক্ষমতাধর দল বা সংগঠন নয়, একটা স্থানীয় সমাজ এই ফ্যাসিবাদের কাণ্ডারী।

ফারুকের ঘটনার পরপরই খবরের কাগজে পুনার একটা ঘটনা চোখে পড়ে। ২৮ বছর বয়সি যুবক মহসীন মহম্মদ সাদিক শেখকে ২ জুন রাতে কিছু হিন্দুত্ববাদী যুবক প্রকাশ্যে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে। তাঁর সম্বন্ধে অভিযোগ, তাঁর ফেসবুকে একটা মেসেজ পাওয়া গিয়েছিল। তাতে নাকি বাল থ্যাকারে, আম্বেদকর এবং শিবাজি সম্বন্ধে খারাপ মন্তব্য ছিল। মহারাষ্ট্র পুলিশ এই ঘটনায় কয়েকজন হিন্দু যুবককে গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু একই সঙ্গে পুলিশ ঘোষণা করে, যারা ওই পোস্টে ‘লাইক’ করেছিল, তাদের ওপরও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সন্দেহ করা হয়েছিল যে হত্যাকারী ওই যুবকদের সঙ্গে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের যোগ রয়েছে। এই ধরনের ঘটনায় কোথাও আরএসএস, কোথাও শিবসেনা, কোথাও বা জামাতের যোগ কিছু থাকতেই পারে। কিন্তু এগুলো এলাকায় এলাকায় অনেকখানি স্বাধীন উদ্যোগেই গড়ে উঠছে।     

আমাদের পাশের পাড়া ঘোষপাড়া। সেখানে রাস্তার ওপর এক হিন্দু মদ্যপ চালকের গাড়ির ধাক্কায় একজন মারা গেলেন রাত এগারোটা নাগাদ। তিনি মুসলমান। পরদিন সকাল থেকে শত শত মুসলমান যুবক আমাদের পাশের ওয়ার্ডের একজন মুসলমান কাউন্সিলার এবং থানার বড়োবাবুর উপস্থিতিতে ওই জায়গাটা থেকে শুরু করে প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে শতাধিক দোকান ভেঙে তছনছ করল। সকলে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হল। কাউন্সিলারের নিজের দলের লোকেরাও ক্ষুব্ধ হল। শান্তি আনার জন্য কয়েকদিন কার্ফু চলল। এত বড়ো নিন্দনীয় কাজের মদতদাতা হিসেবে সেই কাউন্সিলার হিন্দু পাড়ায় সকলের কাছে নিন্দা কুড়োলেন, অবশ্য প্রকাশ্যে নয়, ফিসফিস করে সকলে তা প্রকাশ করল। কিন্তু তিনি বহাল তবিয়তেই থাকলেন। তারপর আমাদের মিউনিসিপ্যালিটি নির্বাচনে সেই কাউন্সিলার প্রার্থী হয়ে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন। অর্থাৎ নিজের কৌমসমাজের মধ্যে ওঁর ভূমিকার কোনো নিন্দা তো হলই না, বরং ওঁকে একজন ক্ষমতাবান কৌম-নেতা হিসেবে দু-হাত তুলে সমর্থন করা হল। এইভাবে ফ্যাসিবাদকে পুষ্ট করে সমাজ বা কৌম-সমাজ। অন্য কৌমের সদস্যদের প্রতিক্রিয়াটা হল এরকম, তারা ঘটনা বা ব্যক্তির নিন্দায় যত না সরব হল, তার চেয়েও বেশি নিজেদের কৌম-বিদ্বেষী মনের ন্যায্যতাকে আরও পুষ্ট করল। ‘হ্যাঁ, মুসলমানরা তো ওইরকমই হয়!’ কিংবা ‘ওরা গরু খায় তো, তাই ওরা এত হিংস্র’ ইত্যাদি মন্তব্য জনমনে আরও গভীরভাবে বসে যেতে থাকে। বিজেপি এই ঘটনাকে নিজেদের নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করেছে। কিন্তু সেখানেই তো বিষয়টা আটকে থাকবে না। বৃহত্তর ক্ষেত্রে আরও বড়ো ও সংগঠিত ফ্যাসিবাদ কায়েম করার বারুদ হিসেবে এইসব অসংখ্য অনু স্তরের ঘটনা দারুণ কাজ করে।

কারণ হিন্দু বা মুসলমান সমাজের আপামর মানুষ ধর্মে কী বলা আছে কিংবা ধর্মগ্রন্থে কী লেখা আছে, তা থোড়াই কেয়ার করে। সত্যি কথা বলতে কি অধিকাংশ মানুষই বেদ-উপনিষদ হাদিস-কোরান পড়েই দেখেনি, বিশেষত পুরুষরা। ধর্মীয় আচার ইত্যাদিতে ব্যস্ততা মেয়েদেরই বেশি। রমজানের সময় উপবাস তো মেয়েরাই বেশি করে। বিয়ের সময় পাত্রপক্ষ থেকে পাত্রীকে জিজ্ঞাসা করা হয়, সে কোরান পড়েছে কিনা। লক্ষ্মীর পাঁচালীটাও তো মেয়েরাই সাধারণত পড়ে। অথচ এইসব দাঙ্গা-হাঙ্গামাতে অংশ নেয় পুরুষেরা, অবশ্যই সেখানে পৌরুষেরও একটা পরীক্ষা তারা দেয়, ভিন্ন কৌমকে শায়েস্তা করে।

বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে একদল রয়েছে, যারা এইসব ধর্ম চর্চাকে নিজেদের বৌদ্ধিক চর্চা মনে করে। নির্দিষ্ট ধর্মের পক্ষে বা বিপক্ষে লিখে তারা বাহাদুরি দেখাতে চায়। তাছাড়া আমাদের চারপাশের কৌম-বিদ্বেষের বাস্তব উপস্থিতি সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী, মৌলবাদ-বিরোধী ইত্যাদি চর্চার একটা বাজারও তৈরি করেছে। কিছু একটা ঘটলেই সেইসব নামজাদা ব্র্যান্ড-বুদ্ধিজীবীদের ডাক পড়ে মিডিয়ার ঘরে। তারা বিবৃতি দেয়, টক শোতে হাজির হয়, মিডিয়া কভার্ড সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী মিছিলে শামিল হয়। কিন্তু এইসব ঘটনায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপ করে না। কারণ তাতে তাদের কৌম-সদস্যতায় ঢ্যাঁড়া পড়ে যেতে পারে।

২০০৫ সালে আকড়ায় এক মাদ্রাসা শিক্ষক ধর্মের সমালোচনা করে একটি পত্রিকার ঈদ-সংখ্যায় একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সেই অপরাধে একদল উন্মত্ত মানুষ তার বাড়ি ও আসবাব পুড়িয়ে দেয়। সেই ঘটনার নিন্দা করার জন্য আমি সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি পরদিন একটা ঈদ-সংখ্যার প্রকাশ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রেস ক্লাবে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমি এই ঘটনার সরাসরি নিন্দা করতে পারব না। আমার বউমা (অমিতাভ সিরাজের স্ত্রী) আকড়ায় একটা মাদ্রাসায় কাজ করে। আপনি কলকাতায় বাংলা একাডেমিতে একটা মিটিং ডাকুন। ওখানে কিছু করা যাবে না।’ তিনি বুদ্ধিজীবীদের মনের কথাটা বেশ স্পষ্ট করেই বলেছিলেন। সম্ভবত ওঁর তখন বেশ বয়স হয়ে গেছে, তাই কোনো চালাকি করতে যাননি। আমরা যে গণস্বাক্ষর নিয়েছিলাম প্রতিবাদস্বরূপ, সেটাতেও তিনি সই দেননি।

এদিক থেকে দেখলে আজকের এই ফ্যাসিবাদের শরিক আমরা বুদ্ধিজীবীরাও। আমাদের বুদ্ধিমত্তার জন্য একদম আলাদা আলাদা প্যাকেটে আলাদা আলাদা পণ্যের বাজার তৈরি হয়েছে। সেখানে মানবিকতা বা নৈতিকতার কোনো সংস্রব থাকতে পারে না। আবার মানবিকতা, নৈতিকতা, সম্প্রীতি, অহিংসা এসবও আলাদা আলাদা প্যাকেটে বিক্রি হচ্ছে। অতএব বুদ্ধিজীবীর কাজ ঘটনায় হস্তক্ষেপ করা নয়, প্রবন্ধ লেখা, কবিতা লেখা, বৌদ্ধিক চর্চায় অংশ নেওয়া, মগজে শান দেওয়া!

এর ফলে প্রতিদিনের জলজ্যান্ত ফ্যাসিবাদ বেড়ে ওঠার জল-হাওয়া পায় বাধাহীনভাবে। ছোটো ছোটো ঘটনা ঘটতে থাকে। ফারুকুল ইসলাম মেটিয়াবুরুজ ছাড়া হয়, মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক কাজী মাসুম আখতারকে মেরে এলাকা ছাড়া করা হয়। পুনার ফেসবুক রাইটার যুবককে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। এগুলো আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। চোখে দেখেও মনে দাগ কাটে না। রোজ কত কিছুই তো এরকম ঘটে, অত আমল দিলে চলে! এরপর আসে বজ্রপাতের মতো একটা বাবরি মসজিদ ভাঙা, একটা গুজরাত ... মিডিয়া তখন ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমরাও মিডিয়ার পিছনে পিছনে সক্রিয় হয়ে উঠি। না, ফ্যাসিবাদকে আর বাড়তে দেওয়া যায় না! মিছিল, সভা-সমিতি, আক্রান্তদের জন্য চাঁদা তোলা, ত্রাণ শুরু হয়ে যায়। তারপর আবার যে কে সেই। বড়ো জোর হাতের সামনে বিজেপি গোছের কিছু পেলে কংগ্রেস কিংবা বামদের দিয়ে ভোটাঘাত। সরকার বদল হয়। কিন্তু কৌম-সংকীর্ণতা কৌম-বিদ্বেষের অবসান হয় না। অবসান তো দূরের কথা, সমাজের অন্তঃস্তলে তার লালন চলতে থাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে। সেখানে হস্তক্ষেপের চিন্তা ছাড়া সমস্ত আলোচনাই অর্থহীনতায় পর্যবসিত হয়।

এই আলোচনা মূলত এক অ-ফ্যাসিবাদী জীবনযাপনের আলোচনা; এক ফ্যাসিস্ত পরিস্থিতির নিত্য মোকাবিলা করে বেঁচে থাকার আলোচনা।

 আমার জন্ম কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন সেবাসদনে। ছোটোবেলা কেটেছে কালীঘাটে। স্কুল, কলেজ পর্যন্ত মুসলমানদের সম্বন্ধে কোনো ধারণাই ছিল না। যখন স্কুলে পড়ি, তখন একবার শহীদুল ইসলাম নামে দাদার এক বন্ধু হোস্টেল থেকে দাদার সঙ্গে এসে বাড়িতে এক রাত থেকেছিল। সেই মুসলমান দেখা। তারপর পরিণত বয়সে মুসলমান সমাজ দেখলাম মেটিয়াবুরুজে থাকতে এসে। উর্দুভাষী, বাংলাভাষী মুসলমান, কারখানার শ্রমিক মুসলমান, মুসলমান পাড়া-বস্তি চোখের সামনে ধরা পড়ল। মুসলমান বন্ধু হল বেশ কিছু। তাদের সঙ্গে কিছুটা হৃদ্যতা হল। একসঙ্গে আড্ডা মারা, খাওয়াদাওয়া, বেড়ানো, একসাথে শোয়া-ওঠা-বসার মতো সম্পর্ক গড়ে উঠল। ছেলে যখন স্কুলে পড়তে গেল, গলায় গলায় বন্ধুদের মধ্যে হিন্দু মুসলমান উভয় থাকল। ভালোবাসার সেইসব সম্পর্কের মধ্যে যে মুহূর্তগুলো গড়ে উঠেছে, সেখানে কৌম-পরিচয়টা নগণ্য হয়ে আসে, অন্য এক আত্মীয়তা গড়ে ওঠে। কৌমের দেওয়ালটা যেন মুছে যায়। সেটা নিছক সম্প্রীতি নয়। এমনকী নাস্তিকতাও নয়। কারণ জন্মসূত্রে নাস্তিক নই, বাবা-মা কেউই নাস্তিক ছিলেন না। তারপর বামপন্থী আদর্শ, রাজনীতি ইত্যাদি করলেও জীবনযাপনের সংস্কৃতির মধ্যে নানান হিন্দু অভ্যাস এসে পড়েছে। নিজেরা ঘরে বা বিয়ের সময় ধর্মীয় আচার পালন না করলেও আত্মীয়স্বজনের বিয়ে-শ্রাদ্ধ-মুখেভাতে গেছি। নানান পুজোআর্চায় মেতে না উঠলেও ষোলোআনা বর্জন করতে পারিনি। সেটা শুধু ভয়ে নয়, সমাজের ভিতরকার স্বাভাবিক সম্পর্কগুলো একটা মাত্রায় উপভোগও করেছি। এতদসত্ত্বেও কৌমের গণ্ডিটা পেরিয়ে যাওয়ার সুখ-মুহূর্তটাও অনুভব করি, উপভোগও করি।

ফারুক যখন লকআপে বন্দি অবস্থায় ছেলেমানুষের মতো কাঁদে, তখন কষ্ট পাই। মোরসালিন যখন আকড়া থেকে পালিয়ে গিয়ে গ্রামে চলে গিয়েছিল, ও যখন হাত দুটো জড়িয়ে ধরে এক অন্য আত্মীয়তার আবেশে, তখন আবেগতাড়িত হয়েছি। সিরাজুলের যখন ক্যানসার হয়েছিল, মৃত্যুর আগের মুহূর্তগুলোতে ওর অসহায়তাকে অনুভব করতাম, কোথায় যেন উধাও হয়ে যেত আমার কৌম-পরিচয়।

কিছুদিন আগে একটা গল্প শুনেছি আমাদের প্রতিবেশী জ্যোৎস্না তপাদারের কাছে। বিয়ের আগে তিনি থাকতেন শিবনগরে। ওঁর ছেলেবেলার স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন ... হিন্দুরা গিয়েছিল মুসলমান বাড়ি ভাঙতে। মাত্র চারঘর মুসলমান ছিল ওখানে। আমার বাবা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে তাদের রুখেছিলেন। বলেছিলেন, আমাকে মেরে তোমরা যেতে পারবে, যাও যেখানে অনেক মুসলমান আছে, সেখানে আগে ভেঙে এসো। ওরা পালিয়ে গিয়েছিল।

শুনেছি জ্যোৎস্না তপাদারের বাবা খুব ডাকাবুকো তাকতদার মানুষ ছিলেন। তাছাড়া তিনি ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থক। সেরকম ডাকাবুকো মানুষ তো আজও কম নেই আর কমিউনিস্টও তো আমরা অনেক দেখেছি। কিন্তু নিজের কৌম-পরিচয়ের বাইরে এসে দাঁড়ানোর এই মুহূর্তগুলো হিসেব করে আর সচেতনতা দিয়ে আসে না। অন্য এক তাগিদ এসে জড়ো হয় মনের মাঝে, কখনো ব্যক্তিগতভাবে, কখনো বা গোষ্ঠীগতভাবে। এরকম গল্প মেটিয়াবুরুজে আরও শোনা যায়। 

অঞ্জলি ডাক্তার তো মুসলমান শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে একাত্মতার জন্য তাঁর ডাক্তারখানা চালাতেন জেলেপাড়ায়, মুসলমান এলাকার মধ্যে। যখন শেষজীবনে মেটিয়াবুরুজ থেকে তাঁর বাস উঠে গেল, তার পরেও খুব কষ্ট করে বাসে চেপে নিয়মিত আসতেন সেই ডাক্তারখানায়। অঞ্জলি ভূষণ রায়চৌধুরি আজীবন সিপিআই করতেন। কিন্তু তাঁর দল বা বামপন্থীরা কিন্তু ১৯৯২ সালে মেটিয়াবুরুজের দাঙ্গায় সেই প্রতিরোধী ভূমিকা নিতে পারেনি।

কৌমের ক্ষমতার বন্ধনকে অস্বীকার করার মুহূর্তগুলো আমার মতো অনেকের জীবনেই নানান রূপে আসে যায়। জীবনের এই দিকটা অফ্যাসিবাদী। আর বিপরীতে রয়েছে কৌমজীবনের এক স্থবির দিক, যেখানে আমি যুক্তিহীন, বিচারবোধহীন। যখন আমার বামপন্থী প্রতিবেশী বলেছিলেন, ‘নারায়ে তকদির শুনলেই আমাদের ডাক দেবেন’, কিংবা ফারুক ‘নবীরে গাল দেছে’ শুনেই সবাই এককাট্টা হয়ে যায়, ডান-বাম-প্রগতিশীল-শিক্ষিত-বুদ্ধিজীবী সকলে মুখে কুলুপ আঁটে --- এখানে কোনো বিচার-বিবেচনা নেই, কোনো মানবিকতা নেই, কোনো অর্জিত সচেতনতা নেই, রয়েছে কেবল এক অনড় স্থবিরতা। বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছে বলেই মুসলমানরা মহল্লায় মহল্লায় প্রতিশোধ নিতে মসজিদ থেকে নারায়ে তকদির আওয়াজ দিয়ে হিন্দুদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে? ফারুক কি সত্যিই নবীকে গাল দিয়েছিল? এসব প্রশ্ন ভেসে যায় কৌম-মনের একতাবদ্ধ শৃঙ্খলায়। আজ এতে ভেসে যাচ্ছে তাবড় শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী সমাজ, তাবড় নাগরিক সমাজ, মুক্তমনা, বামপন্থী। এখানে বিচার বা যাচাইয়ের প্রশ্ন তুলতে গেলেই আমাকে এক পা অন্তত কৌমের বাইরে রাখতে হবে, নিজের কৌম-পরিচয়ের সঙ্গে এক হাত যুঝতে হবে। নাহলে আমিও হয়ে উঠি ফ্যাসিবাদের অংশ। এটা কোরান বাইবেল বা গীতাকে ব্যাখ্যা বা সমালোচনার প্রশ্ন নয়, এটা নিজের কৌম-অস্তিত্বের সঙ্গে লড়াইয়ের অত্যন্ত প্রাথমিক প্রশ্ন। যে নাস্তিক বলে নিজেকে ঘোষণা করে, কিংবা মনে মনে নাস্তিকতা অভ্যাস করে, সে মনে করে কৌম-অস্তিত্বের এই স্তরটা সে পেরিয়ে এসেছে। কিন্তু চৌম্বক ক্ষেত্রের মতোই অদৃশ্য কৌমের টান, একবার তাকে অস্বীকার করলেই পার পাওয়া যায় না। ঐতিহাসিক অমলেন্দু দে ভিন্ন জাতে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু তাঁর মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে তাঁকে কম কাঠখড় পোয়াতে হয়নি। এভাবে বারবার ফিরে আসে কৌম। নিজের গ্রাম, পাড়া, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনকে ছেড়ে পালিয়ে গিয়েও স্থায়ীভাবে নিস্তার পাওয়া যায় না। বারবার নতুন করে সেই গণ্ডিগুলোকে মোকাবিলা করতে হয়, অতিক্রম করতে হয়, হয়ে উঠতে হয় কৌম-পরিচয়হীন মানুষ।        

Jul 03 2015


Jiten Nandi may be contacted at manthansamayiki@gmail.com

Your Comment if any