আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে আমাদের অবস্থান
গৌতম সেন
এই অবস্থান নির্ধারণ করার আগে ও করার জন্য আমাদের প্রথমেই ঠিক করতে হবে এই ‘আমরা’ কারা? এই প্রশ্নের জবাবের সন্ধানে আমাদের তিন দিক থেকে বিষয়টাকে বিবেচনা করতে হবে—
এক: শাসক দল। শাসক বলতে নির্দিষ্ট এক বা একাধিক শাসক দলকে বোঝানো হচ্ছে না—কেননা প্রথমত, ভারতের পার্লামেন্টীয় ব্যবস্থায় যারা কেন্দ্রে বা রাজ্যস্তরে সরকার পরিচালনায় অংশগ্রহণ করছে, এবং তা হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, তারা সবাই শাসক শ্রেণির দল। যেই জিতুক, যেই হারুক, সকলেই শাসক পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থে দেশটা পরিচালনা করছে ও করবে। আর সেটাকেই জনস্বার্থ বলে প্রচার করে ও করবে। যদিও পার্লামেন্টারী রীতি অনুযায়ী এই মুহূর্তে সারা দেশের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি শাসক দল হিসাবে গণ্য ও বিবেচিত।
অভিজ্ঞতা দেখায়--আসন্ন নির্বাচনে মসনদে আসীন হওয়ার জন্য যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে ও প্রচারে জনসেবার নানা প্রতিশ্রুতি থাকার পাশাপাশি এই বা ওই বিষয়ে অগ্রাধিকারের পার্থক্য থাকলেও, এরা সকলেই পুঁজিবাদী পথের পথিক এবং অভিন্ন পুঁজিবাদী কর্মসূচির শরিক। সুতরাং, ভারতের নির্বাচনী চালচিত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী ছোটো-মেজো-বড়ো এবং রাজ্য- বা অঞ্চল-ভিত্তিক অথবা বিশেষ স্বার্থভিত্তিক সমস্ত দলকে শাসক দল হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। বেদনাদায়ক হলেও সত্যি যে, পার্লামেন্টীয় প্রতিযোগিতায় সম্পৃক্ত স্বঘোষিত ও পরিচিত ‘বাম’ দলগুলিও এর বাইরে পড়ে না।
দুই, পু্ঁজিবাদ। ভারতীয় আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাটা নিঃসন্দেহে পুঁজিবাদী; এটা শুধু দেশায়তনে সত্য নয়, বিশ্ব-অর্থনীতির অঙ্গাঙ্গী অংশ হিসাবেও এটা সত্য। শুধু পুঁজির বিপরীতে অবস্থিত শ্রমিক শ্রেণিই নয়, মুষ্টিমেয় পুঁজিপতি এবং তাদের তল্পিবাহকদের কথা বাদ দিলে এদেশের ব্যাপক জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পুঁজি দ্বারা শোষিত ও লাঞ্ছিত। এদিকে সারা দেশে এখানে-ওখানে নানা মত্রায় নানা ভাবে পুঁজির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছোটো-বড়ো লড়াই হয়ে চলেছে। স্বাভাবিকভাবেই দেশের ব্যাপক জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আঘাতের লক্ষ্য পুঁজিবাদের হরেকরকম আক্রমণ।
তিন, শ্রমিক শ্রণি। আমাদের নির্বাচনী অবস্থান অবশ্যই শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থানুগ হতে হবে--তাকে যেমন হতে হবে আশু ও দীর্ঘমেয়াদী উভয় দিক থেকে, তেমনই তা হতে হবে সমগ্র শ্রেণির স্বার্থ থেকে। পাশাপাশি অন্যান্য সামাজিক স্তরের সমস্যার ক্ষেত্রে, এবং ছাত্র-যুব, জাত-জাতি, দলিত-বনবাসী, সংখ্যালঘু, নারী এবং অন্যান্য নানা ধরনের মানুষজনের ওপর নানা স্তরের বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরব হতে হবে। অবশ্য সেক্ষেত্রে সজাগ থাকতে হবে, তা যেন সমগ্র সমাজের স্বার্থা রক্ষা করে; এবং শেষ বিচারে রাজ্য-দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রমিক স্বার্থের অনুযোগী হয়।
(উপরোক্ত তিনটি অবস্থান ‘আমরা’কে গঠন করে এবং তা আমাদের নির্বাচনী অবস্থান নির্ধারণে একযোগে বিবেচিত।)
....
সাম্প্রতিককালে বিজেপি এবং তার সঙ্গে তার ভ্রাতৃ, ভগিনী সংগঠনসমূহ, বিশেষত তার মাতৃ-সংগঠন আরএসএস সাম্প্রদায়িকতার তাস খেলছে, তাদের বহুদিনের অ্যাজেন্ডা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, দলিত ও সংখ্যালঘু বিরোধিতাকে বেশি বেশি করে সামনে নিয়ে আসছে, ভারতে বিদ্যমান গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য-তথা প্রতিষ্ঠানকে (খণ্ডিত, খর্বিতভাবে হলেও যা টিঁকে আছে) আঘাত ও লঙ্ঘন করতে উদ্যত হয়েছে। তার ওপর যেভাবে রামমন্দির ইস্যুকে আবার উসকে দেওয়া হয়েছে তাতে দেশের বহু মানুষজনের সঙ্গে আমরাও উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সব মিলিয়ে বহু সংবেদনশীল মানুষজন এবং রাজনৈতিক কর্মীর মনে বিজেপি-র নির্বাচনী উত্থানকে ঘিরে আশঙ্কা জাগছে এবং তাঁরা তাকে চলতি ভোটবৃত্তের আওতায় ও নির্বাচনী ময়দানে প্রতিহত করার আহ্বান রাখছেন—কেউ প্রত্যক্ষভাবে, কেউ পরোক্ষভাবে। সেই আশঙ্কার সহভাগী হয়ে এবং হয়েও এই প্রসঙ্গে আমাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ভিন্নরূপ--
ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে প্রধান শাসক পার্টি নির্ধারণে মতাদর্শ বা আশু ঘোষিত কার্যক্রমের ভিত্তিতে এই বা ওই দলকে বেছে নেওয়ার কোনো প্রশ্ন ওঠে না -- বিশেষত যেমন কোনো কোনো ‘বাম’ শক্তির পক্ষ থেকে ‘বিজেপিকে হারাও’ স্লোগানের নামে জাতীয় কংগ্রেসকে সোজাসুজি বা ঘুরিয়ে সমর্থন প্রদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হচ্ছে। অবশ্য এর একটা সহসিদ্ধান্ত আছে—যেখানে যে যে আঞ্চলিক দল শক্তিশালী, তাকে সমর্থন করো। এই সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা শুধু অর্থহীন নয়, ভীষণ গোলমেলে। প্রথমত, এরা কংগ্রেস দলের অতীত ঐতিহ্য ভুলে গেছে; এই দলটি শুধু ভারতের শাসক বুর্জোয়া শ্রেণির বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত প্রতিনিধি নয়; প্রয়োজনে যে কোনো স্বৈরাচারী পদক্ষেপ নিতে তারা পিছপা হয়নি; ভবিষ্যতেও হবে না। দ্বিতীয়ত, অভিজ্ঞতা দেখায়, অঞ্চলভিত্তিক বা আঞ্চলিক বা বিশেষ জাত-পাতভিত্তিক দলগুলি ভোটে জেতার পর কখন কার পক্ষ নেবে, তা ‘দেবা না জানে কুতো মনুষ্য’। তৃতীয়ত, ভোটের আগে যেভাবে দল পরিবর্তন হচ্ছে, ভোটের ক্ষমতার ভাগিদার হতে যে ভাবে জোট ভাঙা-গড়া হবে, তাতে আজকের নির্বাচনী সমর্থনের কিংবা মতাদর্শ বা কর্মসূচির কোনো কার্যকরী ভূমিকা থাকবে কী? তাছাড়া, আজ যেমন কেউ কেউ বলছেন বা ভাবছেন—বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে দেশে হিন্দু (বা হিন্দুত্ববাদী) রাষ্ট্র তথা এই বা ওই ধরনের স্বৈরাচারী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটা একেবারে অসম্ভব না হলেও অত সহজ ব্যাপার নয়। তার নেতিকরণের নানা উপাদান আছে। এক, ভারতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ঐতিহের যে সমস্ত শক্তি আছে, (যেমন সংবাদমাধ্যম, আমলাতন্ত্র, বিচারবিভাগ, পুলিশ ও সামরিক বাহিনী ইত্যাদি) তা তাকে মান্যতা দেবে না, বরং বিদ্রোহ করবে, এ সম্ভাবনাই বেশি; দুই, সেরকম পরিস্থিতিতে বিজেপি-র বহু সহযোগী শক্তি শিবির পালটিয়ে ফেলতে পারে; তিন, টিকিট না পেয়ে এখনই যে মসৃণ দলবদল হচ্ছে, তাতে মতাদর্শ, আদর্শ ... এসবের কোনো তাৎপর্য থাকছে বা থাকবে কি? গদির টানে ও লোভে কত কিছু ওলট-পালট হয়ে যাবে; চার, ভারতে ১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা জারি আর তার পতন এবিষয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে রয়েছে। সবচেয়ে বড়ো কথা ‘বিজেপি-র আগমন মানেই স্বৈরশাসন’ এবং তাই আজকের নির্বাচনী রণাঙ্গনে ‘ডিফিট বিজেপি’ একমাত্র আদর্শ স্লোগান—এটা যাঁরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, তাঁরা কেন বিজেপি-বিরোধী সমস্ত দলের দোরে দোরে গিয়ে আহ্বান করছে না, মাথা ঠুকছে না—সামনে ভয়ানক বিপদ, অতএব তৈরি হও, জোট বাঁধো, প্রতিটি কেন্দ্রে বিজেপি-বিরোধী অভিন্ন প্রার্থী দাঁড় করাও। এমনকী জরুরি অবস্থা শিথিল করে যে নির্বাচন আহ্বান করা হয়েছিল, সে-সময়ে দ্রুত যেভাবে ইন্দিরা-বিরোধী দল ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বসমূহ (এবং সংবাদমাধ্যমের একটা বড়ো অংশ) জোট বেঁধেছিল, অনুরূপ প্রক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না কেন?
আমরা দুঃখিত—সংবেদনশীল কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, গায়ক, অভিনেতা, পরিচালক, নাট্যকার সহ সমাজের নানা স্তরের মানুষজনের একাংশের আশঙ্কার সহভাগী হয়েও ’বিজেপি-মার্কা অপপ্রয়াস রোখার এরকম ‘যেনতেন প্রকারেন’ প্রয়াসে আমরা শরিক হতে পারছি না। আমরা অবশ্য সেসবের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখার পক্ষে, তবে তা ভোটবৃত্তের বাইরে, মাঠে-ময়দানে। ভোটের সর্টকার্ট ময়দানে একে মোকাবিলা করার কোনো তাৎক্ষণিক রেডিমেড পন্থা বা রাস্তা আমাদের জানা নেই। তবে ভোটপর্বের পরে সেই দুঃস্বপ্নের দিনটা যদি সত্যিই আসে, তখন ময়দানের লড়াইটাও অন্যভাবে লড়তে হবে।
...
এদিকে শাসক শ্রেণি এবং তাদের বিশ্বস্ত তাত্ত্বিকবৃন্দ এবং বশংবদ দলসমূহ প্রচার করে চলেছে চালু রাজনৈতিক ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। মর্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে এই ভারত পর্যন্ত সকলে সমবেতভাবে বলে চলেছে, দেশ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে বহুদলীয় পার্লামেন্টীয় ব্যবস্থার থেকে ভালো কিছু হয় না।
ওদিকে ভুক্তভোগী জনগণের অভিজ্ঞতা-- এই পার্লামেন্টীয় ব্যবস্থায় জনগণের স্বার্থ রক্ষিত হয় না। নির্বাচনের আগে যে প্রতিশ্রুতিই দেওয়া হোক না কেন, প্রতিটি নির্বাচিত সংসদ এবং গোটা সংসদীয় ব্যবস্থাটা পুঁজিপতিদের বিশেষত টাটা, বিড়লা, আম্বানি, আদানি প্রমুখদের এবং বিদেশি কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থ দেখে।
এদেশের কোটি কোটি শ্রমিক বারবার পথে নেমেছে ন্যূনতম মজুরি এবং অন্যান্য ন্যায়সঙ্গত দাবির স্বপক্ষে, কৃষকেরা বারবার বিক্ষোভ-মিছিল সংগঠিত করেছে তাদের দুর্দশাকে দূর করতে। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক-কর্মচারী রেল-ব্যবস্থা, টেলিকম, ব্যাঙ্ক সহ জাতীয়কৃত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা ও চিকিৎসা-পরিষেবার বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধে বাববার লড়াইয়ের ময়দানে সামিল হয়েছে। সংসদীয় মঞ্চে তাদের সমস্যা দূর হওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া দূরের কথা, যথাযথ গুরুত্বও পায়নি।
জনগণের জ্বলন্ত সমস্যা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে পুলওয়ামায় সেনাবাহিনীর ওপর সাম্প্রতিক হানাকে কাজে লাগিয়ে দেশপ্রেম ও যুদ্ধজিগির তোলা হচ্ছে। বিজেপি ও কংগ্রেস পারস্পরিক প্রতিযোগিতায় ময়দানে নেমে পড়েছে এটা প্রমাণ করতে যে কে কত বড়ো দেশপ্রেমিক, যদিও ওই ‘দেশ’-ভাবনায় স্বাভাবিকভাবেই দেশের আপামর জনগণ নেই।
ভারতের সংবিধানের মুখবন্ধের ভাষ্য অনুযায়ী চালু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী। অথচ বাস্তব সত্য হল, সংবিধান ক্যাবিনেটকে জনগণের হয়ে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্পণ করেছে। (সাম্প্রতিক উদাহরণ-- ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদী যে ‘নোটবন্দি’ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন তার জন্য পার্লামেন্টের আগাম অনুমোদনের কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না।)
ভারতের সংবিধান অনুযায়ী প্রতিটি নাগরিকের শুধু ভোটদানে অংশগ্রহণের অধিকার আছে, তা-ই নয়, তাদের প্রার্থী হওয়ারও সম-অধিকার আছে। অথচ অভিজ্ঞতা দেখায়, (ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ছাড়া) যে সমস্ত দল বা প্রার্থীর ক্ষেত্রে পুঁজিপতিদের সমর্থন ও আশীর্বাদ থাকে, তারাই ভোটে জেতে। এই দিকে তাকিয়ে ভোটপর্বটা সাজানো হয়; এবং এক একজন প্রার্থী ভোটপ্রচারে কোটি কোটি টাকা খরচ করে। এটাই রেওয়াজ। আর কে না জানে ‘বাঁশির সুর সেই ঠিক করে দেয়, যে বাঁশি কিনে দেয়।’ এটা ঘটনা যে বিজেপি এবং কংগ্রেস পার্টি বড়ো বড়ো পুঁজিপতিদের সমর্থন পায়, তবে অঞ্চল-ভিত্তিক বা তুলনামূলক ছোটো, রঙবেরঙের দলগুলো বিভিন্ন স্বার্থভিত্তিক পুঁজিপতিদের অর্থ-আনুকুল্য থেকে বঞ্চিত হয় না।
এই গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থায় আর একটা চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা করলে এই ব্যবস্থার অন্যায্যতা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। একটি নির্বাচনী ক্ষেত্রে যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তাকে জয়ী হিসাবে ঘোষণা করা হয়, শুধু তা-ই নয়, তিনিই জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে স্বীকৃতি পান। এই রীতির ফলে এমনও দেখা গেছে, নির্বাচকমণ্ডলীর মাত্র ১০ শতাংশের সমর্থন পেয়েও একজন ‘জনগণের প্রতিনিধি’র তকমা পেয়ে গেছেন।
ভারতের মতো বহুজাতিক, বহুভাষিক এবং বহুত্ববাদের দেশে নির্বাচনী চালচিত্রে আর একটা বিষয় নজরে আনতে হবে —অন্যান্যবারের মতো এবারের নির্বাচনেও এমন বহু আঞ্চলিক এবং ছোটো দল আছে যারা সাধারণভাবে পুঁজির স্বার্থ দেখার পাশাপাশি আঞ্চলিক পুঁজিবাদী স্বার্থ এবং/অথবা বিশেষ বিশেষ জাত-পাত-সম্প্রদায় অথবা জাতির স্বার্থ দেখে। এই বিশেষ বিশেষ পুঁজি-গোষ্ঠীর স্বার্থ দেখতে গিয়ে এবং নিজেদের স্বার্থে নির্বাচনের আগে এবং ফলাফল বেরোনোর পরে তারা কে কখন কোথায় তরী ভেড়াবে তা কেউ বলতে পারে না; হয়তো বা তারাই কেন্দ্রে সরকার গড়ার নিয়ামক হয়ে উঠবে।
একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, যে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে খাতায়-কলমে জনগণই নিয়ন্ত্রক, তাদের কী অসম্মানজনকভাবে ব্যবহার করা হয়। ভোট প্রচারে তাদের দেখা হয় সম্ভাব্য প্রাপক ও গ্রহীতা হিসাবে—ভোট-পার্টিরা সকলে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে ভোটে জিতলে ‘এটা দেব, ওটা দেব’ বলে। কিছু কিছু দেওয়া হয় না, তা নয়—তবে সেটা ভিক্ষার দান হিসাবে, অধিকার হিসাবে নয়। তবে বেশিটাই ধোঁকা দেওয়া হয়।
প্রতিবাদী বা বিক্ষুব্ধ জনগণের পক্ষ থেকে কখনও কোথাও প্রার্থী যে দেওয়া হয় না, তা নয়, তবে তারা ভোটে লড়ার স্বাভাবিক রসদ থেকে বঞ্চিত হয়, এবং সাধারণভাবে পরাজিতই হয়। অবশ্য লড়াই বিকাশের একটা উন্নত পর্যায়ে লড়াইয়ের প্রতিনিধিত্বকারী কোনো প্রার্থী আকাঙ্ক্ষিত ফল পেতেও পারে—তবে তা ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রেই। আর একটা কথা -- জনপ্রতিনিধি হিসাবে একবার নির্বাচিত হয়ে গেলে সংসদে তারা দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়—শাসক আর বিরোধী পক্ষ। শাসক পক্ষ পুঁজিপতিদের, বিশেষত কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থে আইন প্রণয়ণ করে এবং তার অনুযোগী পলিসি চালু করে; বিরোধী পক্ষ জনগণের হয়ে ফালতু চেঁচামেচি করে, কুমীরের কান্না কাঁদে, এবং তাদের পালা ফিরে আসার অপেক্ষা করে।
একবার নির্বাচন হয়ে গেলে, পার্লামেন্ট গঠিত হয়ে গেলে, জনগণের ভূমিকা গ্রহীতার উর্দ্ধে উঠতে পারে না; সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো প্রক্রিয়ায় তাদের কোনো ভূমিকা থাকে না; নির্বাচিত প্রতিনিধিদের যারা নির্বাচন করলেন, তাদের কাছে কৈফিয়ৎযোগ্যতার কোনো দায় থাকে না। নির্বাচকমণ্ডলী জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি না মানলে অথবা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা পালন না করলে তাদের ফিরিয়ে আনার কোনো ব্যবস্থা থাকে না।
শ্রমিক এবং ব্যাপক শ্রমজীবী জনগণের পক্ষ থেকে নিজেদের অধিকারসমূহ রক্ষা করা এবং তা প্রসারিত করার কোনো রক্ষাকবচ বিদ্যমান প্রতিনিধিত্বকারী ব্যবস্থায় নেই। সেদিক থেকে তা অকেজো ও বাতিল হিসাবে প্রমাণিত।
সুতরাং, আমাদের অর্থাৎ জনগণের নিজস্ব ক্ষমতার আধার গড়ে তোলার লড়াইয়ে আমাদের সামিল হতে হবে; যেখানে শাসক আর বিরোধীপক্ষ হিসাবে বিশেষভাবে চিহ্নিত কেউ থাকবে না। আমরা সবাই মিলে তা গড়ে তুলব এবং অংশগ্রহণ করব। সেই লড়াইটা শুরু হতে পারে যে কোনো সময়ে যে কোনো ভূ-রাজনৈতিক এলাকা থেকে, তবে যেহেতু আমাদের লড়াইটা পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে, তার পূর্ণতা পাবে ও পরিসমাপ্তি ঘটবে বিশ্বায়তনে।
....
যাঁরা বিজেপি-কে আলাদাভাবে প্রত্যাখ্যান করাকে লক্ষ্য করেছেন, তাঁরা দেখেও দেখছেন না যে দিল্লির কুর্সি দখল বা তার অংশিদার হতে এদেশের ছোটো-মাঝারি-বড়ো দলগুলি প্রতিযোগিতায় নেমেছে ধর্ম, জাত-পাত-প্রাদেশিকতা-বর্ণ-জনজাতি প্রভৃতি আবেগ ও স্বার্থকে কাজে লাগিয়ে নিজ নিজ ভোটব্যাঙ্ককে স্ফীত করতে। ইদানিং আবার কাশ্মীরকে ইস্যু করে, পাক-ভারত বৈরিতাকে কাজে লাগিয়ে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উগ্র দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ।
যাঁরা বিজেপিকে দাঙ্গা ঘটানোর জন্য, সাম্প্রদায়িক জিগির তোলার জন্য বিশেষভাবে চিহ্নিত করছেন, বিজপি-র মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসন কায়েমের সম্ভাবনার কথা তুলছেন, তাদের আশঙ্কা যে মিথ্যা নয়, একথা ঠিকই। কিন্তু, তাঁরা অন্যন্য প্রতিদ্বন্দ্বী দলের, বিশেষত প্রধান প্রতিপক্ষের অতীত আচরণ হয় ভুলে গেছেন বা ইচ্ছে করে ভুলে যাচ্ছেন। ওড়িশার রাউরকেল্লায়, বিহারের ভাগলপুরে, অসমের নেলিতে কে দাঙ্গা বাঁধিয়েছিল? দিল্লিতে শিখ নিধন যজ্ঞের নায়ক কে? এই কংগ্রেসই তো জরুরি অবস্থা জারি করেছিল! টাডা, মিসা, এসমা ...এসব তো এরাই জারি করেছিল। (অথচ যে দিকে পথনির্দেশ করা হচ্ছে, অথচ স্পষ্ট করে কথাটা বলা হচ্ছে না, তা হল সারা ভারতের ক্ষেত্রে ‘বিজেপি-কে হারাও’-এর সঙ্গতিপূর্ণ আচরণ হল—চুপচাপ/হাতে ছাপ) ১৯৭৭-এর জরুরি অবস্থার অবসানের পর প্রাক্তন কংগ্রেসি এবং প্রাক্তন জনসঙ্ঘী সহ যে মিলিজুলি জনতা সরকার কায়েম হয়েছিল, নানা কালা কানুন জারির পাশাপাশি সবচেয়ে কম সময়ে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক হত্যার রেকর্ড তো তারাই করেছিল। আর আজকের বামফ্রন্টীয় দলগুলি নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর সহ যে স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, তাতে তাদের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বেশি কথা সাজে না। তার ওপর নিজেদের ডুবন্ত তরী বাঁচাতে গিয়ে আজ সেই বামেদের কংগ্রেসকে প্রকারান্তরে ‘সেকুলার ও গণতন্ত্রী’ আখ্যা দিতে হচ্ছে। ভোট ও গদির স্বার্থে তারা ইতিহাসের আর কত বিকৃতি ঘটাবে? আর তৃণমূল কংগ্রেস? তাদের কর্মসূচিতে যতই জনমোহিনী প্রতিশ্রুতি থাকুক, তা যে পুঁজিবাদী কর্মসূচিই, এটা তারা অস্বীকার করতে পারে না। আর মাত্র ক-বছরে পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে তারা প্রতিবাদী জনগণ এবং বিরোধীদের ওপর যে সন্ত্রাস নামিয়ে এনেছে, ক্রমাগত যে নরম সাম্প্রদায়িকতার তাস খেলছে, তাতে বিজেপি-র সম্ভাব্য স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তারা যে সঙ্গতিপূর্ণ লড়াই চালাতে পারছে না, পারবে না, এ-কথা হলপ করে বলা যায়। আর বিজেপি-কে রুখতে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তারা যে কংগ্রেসের দিকে হাত বাড়িয়ে আছে, সুযোগ পেলেই আক্ষরিক অর্থেই সোনিয়া-রাহুলের হাতে হাত মেলাচ্ছে ও মেলাবে, তার দিশা ও পরিণতি মোটেই জনমুখী ও গণতান্ত্রিক নয়।
ভোট-রাজনীতিতে দুর্নীতির উপাখ্যান
ভোটের সময়ে যে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়, সে টাকা কে দেয়? অবশ্যই পুঁজিপতিরা, ব্যবসায়ীরা দেয়। তারা নিশ্চয়ই দান-খয়রাতি করে না। তারা নিশ্চিত-- ভোটের পর ঠিক পুষিয়ে নেবে। অতীত অভিজ্ঞতাও তা-ই বলে। দেশের অর্থনীতি যেভাবে পরিচালিত হয়, সাধারণভাবে তা পুঁজি ও পুঁজিপতিদের স্বার্থ তো দেখেই, তার ওপর বিশেষ বিশেষ পুঁজিপতি এবং কর্পোরেট সেক্টর বিশেষ বিশেষ সরকারের কাছ থেকে মদত পায়, সুবিধা আদায় করে নেয়। চলতি ঘরানায় এগুলো স্বাভাবিক ধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি পায়। একটা সীমা অতিক্রম করলে প্রতিদ্বন্দ্বী পুঁজিপতি গোষ্ঠী বঞ্চিত বোধ করলে ‘দুর্নীতি, দুর্নীতি’ বলে শোরগোল শুরু হয় এবং মিডিয়ার কল্যাণে তা খবর হয়ে ওঠে। ভাবটা যেন সেই বিশেষ ‘ডিল’টা জোচ্চুরি, আর বাকি অর্থনীতিটা চলছে বেশ ‘সাত্ত্বিকভাবে’। একটু গভীরে চোখ মেললে দেখা যাবে দুর্নীতিটা এই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে গেছে; আর তাকে আগা-পাছতলা উৎপাটিত করতে না পারলে তার থেকে মুক্তি নেই।
২০১৬ সালে এক শতাংশ ধনী ভারতের মোট সম্পদের ৫১ শতাংশের মালিক ছিল। এইভাবে আর দু-বছরের মধ্যে এক শতাংশ ধনীর সম্পদ বেড়ে ৭১ শতাংশ হয়েছে। এখন ভারতের ৯০ ভাগ নাগরিকের যা সম্পদ রয়েছে, সেই পরিমাণ সম্পদ রয়েছে ৫৭ জন কোটিপতির।
শিল্পপতি মুকেশ আম্বানির সম্পত্তির পরিমাণ ২ লক্ষ ৪৭ হাজার কোটি টাকা ; দিলীপ সিংভির মোট সম্পত্তি ১ লক্ষ ২৮ হাজার ১২২ কোটি টাকা; গৌতম আদানির ১ লক্ষ ৭০ হাজার ২৩০ কোটি; আজিম প্রেমজির ১ লক্ষ ৩০ হাজার ২৫১ কোটি। এমনকী বিজেপি প্রেসিডেন্ট অমিত শাহের এই সময়ে সম্পদ বেড়েছে ৩০০ শতাংশ, আর তার ছেলের বেড়েছে ১৬ হাজার শতাংশ।
এদিকে ব্যাঙ্কগুলির কোটি কোটি টাকা লুঠ করে বিজেপি-কংগ্রসের মতো বড়ো বড়ো দলের দোসর শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরা বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। আর ব্যাঙ্ক শিল্পপতিদের ১০ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করতে দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, শিল্পপতিদের ২ লক্ষ ৭২ হাজার কোটি টাকা প্রাপ্য ট্যাক্স সরকার মকুব করে দিয়েছে। এ পর্যন্ত বিদেশে প্রায় ১০০ লক্ষ কোটি টাকা কালো টাকা হিসাবে সঞ্চয় করতে দিয়েছে।
অন্য সময়ে তো বটেই, বিশেষত এই নির্বাচনের সময়ে দুর্নীতি-তরজায় একটা উপভোগ্য ঘটনা ঘটে—একে অপরের দুর্নীতির ছোটো-বড়ো কেচ্ছাকাহিনী ফাঁস করে দেয়—এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটছে না।
[দুর্নীতি সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে এসইউইসিআই (কম্যুনিস্ট) প্রকাশিত পুস্তিকা ‘জনস্বার্থে নির্বাচনকে কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে’ থেকে সংগৃহীত]
অথ উন্নয়ন বার্তা ও চর্চা
সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলিতে অন্যতম ইস্যু হয়ে উঠেছে উন্নয়ন। এই ‘উন্নয়ন’ বলতে অবশ্য দেশের নাগরিকের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য প্রভৃতির সার্বিক উন্নয়ন বোঝানো হয় না। এই উন্নয়ন বলতে রাস্তাঘাট সংস্কার, উড়াল পুল নির্মাণ, রাস্তায় ঝকঝকে আলো, কয়েকটা প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্কুল নির্মাণ, কন্যাশ্রী প্রমুখ প্রকল্প চালু....তার সঙ্গে দুর্বল-অনগ্রসর অংশকে ভাতা প্রদান, বড়ো জোর কোথাও ফ্রি-তে সাইকেল, কোথাও কম্পিউটার.....। এই-সব তথাকথিত উন্নয়ন নিয়ে এত শোরগোল তোলার কী আছে? দুনিয়ার নানা দেশের দিকে তাকিয়ে দেখুন। সে সরকার যত স্বৈরাচারী বা গণতান্ত্রিক হোক না কেন, এহেন উন্নয়ন ঘটিয়েই চলেছে। না হলে পুঁজির চাকাটা মসৃণভাবে চলবে কী করে। পুঁজির বিনিয়োগ, মুনাফা, সঞ্চয়নের স্বার্থে এ-সব উন্নয়ন তো কম-বেশি করেই যেতে হবে। বৃটিশ ভারতের দিকে তাকিয়ে দেখুন—তারাই তো এদেশে রেলওয়ের প্রবর্তন করেছিল, আধুনিক শিক্ষার উপযোগী স্কুল-কলেজ বানিয়েছিল—এগুলো উন্নয়ন (!) নয়? এসব তারা করেছিল নিজেদের স্বার্থে; তার উপরি-ফসল ভারতবাসী ভোগ করেছিল। আজও সারা ভারত জুড়ে উন্নয়নের যে যজ্ঞ চলছে, তা তো পুঁজিবাদী রথের চাকা মসৃণ করতে; তাতে জনস্বার্থের যতই ছাপ মারার চেষ্টা করা হোক, তার গতি, তার প্রকৃতি, তার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে যতই জনগণকে মোহিনীমায়ায় আচ্ছন্ন করার চেষ্টা করা হোক, আমাদের সেই-সব উন্নয়নের আসলি চরিত্র বুঝতে যেন ভুল না হয়। এই উন্নয়নের ফলাফলে চিড়ে ঠিকমতো ভিজছে না দেখে, ইদানিং আবার দাদনের নতুন ঢং হয়েছে—কেউ বলছে গরিবের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এককালীন এত লক্ষ টাকা দেবে; কেউ বলছে বছরে এত হাজার টাকা দেবে। তাতেই তো গরিবের জীবন দিব্যি চলে যাবে, তার গরিবি দূর হয়ে যাবে!
নির্বাচনী যুদ্ধে ‘অমুক দেব’, ‘তমুক দেব’ যত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হোক না কেন, শেষমেষ আমাদের অভিজ্ঞতালব্ধ সামান্য শিক্ষায় এতদিনে যেটুকু বুঝেছি, উন্নয়নের আসল চরিত্র ও লক্ষ্য হল দেশ-বিদেশের পুঁজিপতিদের স্বার্থে উন্নয়ন, পুঁজিবাদী উন্নয়ন। তাতে যেটুকু চুঁসয়ে পড়বে পড়ুক মাঝেমধ্যে কিছু দয়া-দাক্ষিণ্য বিতরণ। সেসব পেতে ও নিতে অবশ্য আমাদের অআপত্তি নেই। কিন্তু, তা গ্রহণ করার পাশাপাশি অআমাদের একদিকে বলে যেতে হবে—বাকিটা কই? আর একদিকে চিৎকার করে বলতে হবে --- সব ঝুট হ্যায়।
বিশেষ কয়েকটি দিক
এক, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণকে কেন্দ্র করে নতুন করে যে উগ্র জাতীয়তাবাদের জিগির তোলা হচ্ছে এবং বিক্ষুব্ধ কাশ্মীরি জনগণকে আঘাতের লক্ষ্য করা হচ্ছে, আমরা তার তীব্র বিরোধিতা করছি। একই সঙ্গে আমরা কাশ্মীর সমস্যার মূল যে প্রশ্ন ‘আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন’, তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। পাশাপাশি ভারত-পাক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে যুদ্ধ উন্মাদনা তোলা হচ্ছে, এবং তাকে ভোট-বৈতরণী পার করার কাজে ব্যবহার হচ্ছে, তার তীব্র বিরোধিতা করছি।
দুই : সঙ্গত কারণেই রাহুল গান্ধী ও তার সহযোগীরা প্রধানমন্ত্রী মোদী ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে বিরাট দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন এবং তাকে ভোটযুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। মোদীজির পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতিকে বিন্দুমাত্র খাটো না করে আমরা দুর্নীতিতে ঐতিহ্যময় কংগ্রেসের অতীত ইতিহাসকে মনে করিয়ে দিচ্ছি। আর সজোরে বলছি –দুর্নীতিবাজ কোনো দলকে কোনো ছাড় নয়। সব চোর হ্যায়।
তিন; ভারতের বিশেষত উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের রাজ্যে রাজ্যে যে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন আইন চালু রয়েছে, তা তো স্বৈরাচারী শাসনেরই প্রকাশ। জাতীয় কংগ্রেস তার নির্বাচনী ইস্তাহারে সেই আফসপা-কে পুনর্বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। একেবারে ‘না ভাবার থেকে দেরিতে হলেও ভালো’—সেই আপ্তবাক্য স্মরণ করার পর মনে করিয়ে দিতে চাই –এই স্বৈরাচারী আইন কংগ্রেসই চালু করেছিল এবং ভোটের ফল যদি কংগ্রসের অনুকূলেও যায়, তাতেও শেষমেষ কী হবে, কিচ্ছু বলা যায় না।
চার; জাতীয় নাগরিক পঞ্জি-র নামে অসম থেকে লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী জনগণকে ‘বিদেশি’ চিহ্নিত করে দেশ থেকে বিতাড়নের অপপ্রয়াস ও চক্রান্ত চলছে। শুধু তা-ই নয় সস্তায় বাজিমাত করতে আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে এই বাংলাতে এবং সারা দেশে অনুরূপ পঞ্জিকরণের হুমকি দেওেয়া হচ্ছে। আমরা এই জনবিরোধী প্রয়াস ও হুমকির তীব্র বিরোধিতা করছি।
পাঁচ, ভোটের আগে ‘রাম মন্দির’ ইস্যুকে আবার উস্কে দেওয়া হচ্ছে, যা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এবং মুসলিম-বিদ্বেষ বাড়িয়ে তুলতে মদত জোগাচ্ছে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলছে। দেশের সমস্ত সংবেদনশীল মানুষজন স্বাভাবিকভাবেই এই অপপ্রয়াসের বিরোধিতা করছে।
ছয়, ‘বিজেপি-কে হারাও’-এর রণনৈতিক স্লোগানের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে বিজেপি-র জোটে না-থাকা বিভিন্ন আঞ্চলিক দলকে নির্বাচনী সমর্থন। অতীত অভিজ্ঞতা দেখায় -- ভোটে জেতার পর এরা কখন কে কার সঙ্গে জোট বাঁধবে, ক্ষমতার শরিক হতে বিজপি-কে ক্ষমতাসীন হতে কখন সাহায্য করবে, তা কেউ জানে না।
সাত, স্মৃতি সততই সুখের না হয়ে মর্মান্তিকও হতে পারে। বিশ শতকের সাতাত্তরে জরুরি অবস্থার এবং ইন্দিরা জমানার অবসানের পর ‘জনতা সরকারের’ পরীক্ষা ব্যর্থ হয়। তারপর ৮০-র দশকের শুরুতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতে তাবড় তাবড় ইন্দিরা-বিরোধী শক্তির পক্ষ থেকে ‘ইন্দিরা স্বৈরতন্ত্র’বিরোধী ‘বাম ও গণতান্ত্রিক মোর্চা’-কে জয়যুক্ত করার আওয়াজ তোলা হয়। সেই তথাকথিত ‘বাম ও গণতান্ত্রিক’ শিবিরে কে ছিল না? প্রাক্তন জনসঙ্ঘী থেকে শুরু করে ইন্দিরার একান্ত অনুগামী সিদ্ধার্থ শংকর, প্রিয় দাসমুন্সি, দেবকান্ত বড়ুয়া প্রমুখ তাবড় তাবড় নেতৃবৃন্দ, আর প্রতিষ্ঠিত ‘বাম’ দলগুলো তো ছিলই। সেই ‘গণতান্ত্রিক’ শক্তিসমূহ কীভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছিল এবং ঘরের ছেলেরা একে ঘরে ফিরেছিল, সে ইতিহাস একই সঙ্গে হাসি ও বেদনার খোরাক জোগায়।
...
বিজেপি-র বিশেষত সঙ্ঘ পরিবারের সাম্প্রদায়িক জিগির, সংখ্যালঘু বিদ্বেষ এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর আঘাতের অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হয়েও আসন্ন ভোটযুদ্ধে সেই অপপ্রয়াস নির্মূল করার কোনো সর্টকার্ট রাস্তা আমাদের জানা নেই। নানাভাবে অবশ্য লড়াই জারি আছে, আর তাতে আমরাও সামিল। আমরা আমাদের অন্যান্য বহু সাথিদের মতো এই লড়াইকে আলাদা গুরুত্ব দিতে চাই।
পরিশিষ্ট
মনে রাখতে হবে পৃথিবীর যে সমস্ত দেশে প্রত্যক্ষ স্বৈরশাসন রয়েছে, তার তুলনায় ভারতের মতো দেশে যে পার্লামেন্টীয় গণতন্ত্র চালু রয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক অস্তিত্ব ও সংগ্রামের নিরিখে তা শতগুণে শ্রেয়। এই পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র যতই খণ্ডিত, খর্বিত হোক না কেন, মত প্রকাশের, সংগঠন গড়ার, পত্রপত্রিকা প্রকাশের যে অধিকার রয়েছে, তা শ্রেণি ও গণসংগ্রাম গড়ে তোলার উপযোগী শর্ত প্রদান করে। তার ওপর ভোটের সময়ে শুধু প্রতিবাদী মত প্রকাশ ও সংগঠিত করার সুযোগ পাওয়া যায়, তা-ই নয়, তার শক্তি যাচাইয়ের সুযোগ পাওয়া যায়। (অবশ্য ইদানিংকালে এদেশে প্রতিবাদী কম্যুনিস্ট/ শ্রমিক ধারা এত দুর্বল ও অসংগঠিত, সেই সুযোগও প্রয়োগ করা যাচ্ছে না।) লক্ষ্যণীয়, ভোটের আগে প্রতিদ্বন্দ্বী সমস্ত শাসক দল সমগ্র জনগণের, বিশেষভাবে টার্গেট করা জনগণের এই বা ওই অংশকে কনসেসন দেবার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে এবং ভোটে জিতে মসনদে আসীন হলে, তার কিছু পূরণও করে। আমাদের অবশ্য তা পেতে ও নিতে কোনো আপত্তি নেই, সেই সংযোজনটা সহ—বাকিটা কই?
আজ একথা আর তথ্য দিয়ে প্রমাণ করার দরকার নেই যে এই সময়ে এদেশে একদল লোকের অনেক অনেক আছে আর বিশাল সংখ্যক মানুষের কিছুই বা প্রায়-কিছুই নেই। খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান -- মানুষের বেঁচে থাকার ন্যূনতম সংস্থান থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষজন আক্ষরিক অর্থেই বঞ্চিত। অবশ্য যাঁরা চরম দারিদ্র্যে বাস করেন না, তাঁদের যৎসামান্য জোটে, কষ্টেসৃষ্টে দিন কেটে যায়--তবে তাতেও মর্যাদা নিয়ে বাঁচা যায় না।
অথচ দেশের যাবতীয় সম্পদ সৃষ্টির পেছনে দেশের সকল মানুষজনের অবদান রয়েছে; যাঁরা কাজের সুযোগ পান না, মানে বেকার হিসাবে পরিচিত, তাদেরও তাতে পরোক্ষ ভূমিকা অনেক সময়ে থাকে; প্রসঙ্গত, যাঁরা কাজের কোনো সুযোগ পান না, তার জন্য তারা দায়ী নন, দায়ী দেশের কর্ণধারদের অনুসৃত নীতি। আর বেঁচে থাকার জন্য, বাঁচিয়ে রাখার জন্য কাজও আমাদের অন্যতম অধিকার।
এদিকে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে, একটু-আধটু বই-পড়া থেকে জানতে পারি, কোনোরকম পরিশ্রম না করে, শুধুমাত্র যথা সময়ে যথা হিসেব কষে যারা শেয়ার কেনেন, যারা বৃহৎ কোম্পানির উচ্চাসনে বসার জন্য এবং তা চালিয়ে যাবার জন্য সামান্য পরিশ্রম করেন, তাঁরা ধনের শিখরে বসে থাকেন। আর নিজেদের সাফল্যের কীর্তি নিজেরাই গেয়ে থাকেন। শুধু খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান নয়, জীবনের সবকিছু আমোদ-প্রমোদ, সাধ-আহ্লাদ তাঁরা চূড়ান্তভাবে ভোগ করেন, যেখানে আবার অতিরিক্ত পাওয়াটা, অপচয় হওয়াটা স্বাভাবিক।
এইরকম গভীর ও ভয়ঙ্কর পরিস্থতিতে আমরা নিজেদের ও সকলের সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার স্বার্থে প্রস্তাব রাখছি নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষ থেকে বা হয়ে নিজেদের আত্মরক্ষার স্বার্থে যে যেমনভাবে নিজেদের দাবি উত্থাপন করি না কেন, আসুন নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে একযোগে লড়াই শুরু করি এবং তাকে যথাযথ রূপ দিতে গড়ে তুলি একটি অভিন্ন প্রয়াস। আমাদের দাবি খুব সামান্যই--
আমরা চাই সকলের জন্য খাদ্য—সুষম পুষ্টিকর খাদ্য।
-
আমরা চাই সকলের জন্য বস্ত্র—ছেঁড়াফাটা বা ফেলে-দেওয়া জামাকাপড় নয়, উপযুক্ত বস্ত্র।
-
আমরা চাই সকলের জন্য শিক্ষা—তার জন্য যথাযথ পরিবেশ ও কাঠামো।
-
আমরা চাই সকলের জন্য বাসস্থান--৮ ফুট বাই ৮ ফুট মার্কা মাথা-গোঁজার ঠাঁই নয়, সুস্থ পরিবেশে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার আয়োজন।
-
আমরা চাই সকলের জন্য স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা—গরিবদের জন্য গরিবি ব্যবস্থা নয়—সুষম ও যথাযথ আয়োজন।
-
আমরা চাই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দেখভালের সামাজিক ব্যবস্থা এবং তদের সামাজিক সুরক্ষা।
-
আমরা চাই কাজ-হারানো শ্রমিক সহ সকলের কাজের অধিকার।
-
আমরা চাই জন-প্রতিনিধিদের শুধু নির্বাচন করার নয়, প্রত্যাহার করবার অধিকার।
-
আমরা চাই লিঙ্গ ও জাত-পাতভিত্তিক সব ধরনের বৈষম্যের অবসান।।
আমাদের এইসব প্রাথমিক দাবির সঙ্গে আরও দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দাবি যোগ করা প্রয়োজনীয়--
-
প্রথমত, দাবি নিয়ে সংগঠিত হওয়ার সময়ে আমরা মুখোমুখি হব বেসরকারি হুমকি, হামলা আর সরকারিভাবে গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর আক্রমণ। তাই গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা আমাদের অন্যতম অ্যাজেন্ডা।
-
দ্বিতীয়ত, যত দিন যাচ্ছে লাভ ও লোভের লাগামছাড়া তাড়নায় আমাদের বাসযোগ্য গ্রহ এই বিশ্ব ক্রমে বাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। তাই পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বটা আমাদের কাঁধে তুলে নিতেই হচ্ছে। পৃথিবীটাই যদি বাসের অযোগ্য হয়ে ওঠে, তা হলে অন্য অধিকার থেকে আমাদের কী লাভ!
সব শেষে একটা বিষয়ের দিকে দৃষ্টি অআকর্ষণ করি—রাজ্যে রাজ্যে এবং কেন্দ্রের শাসক দলের প্রতিনিধিরা প্রায়শই বিদেশে যান পু্ঁজিপতিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এবং বিদেশ থেকে আগত প্রতিনিধিদের সঙ্গে মউ-চুক্তি স্বাক্ষর করেন। উদ্দেশ্য পুঁজির বেশি বেশি বিনিয়োগ। কতটা সফল হন, তা অবশ্যই বিতর্ক ও আলোচনা সাপেক্ষ। তবে একটা কথা ঠিক, পুঁজি বিনিয়োগ মানেই সাধারণভাবে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি –সে যুগ চলে গেছে। আজকের ‘জবলেস গ্রোথ’-এর যুগে পুঁজি বিনিয়োগের ফলে নির্দিষ্ট কোথাও কর্মসংস্থান তৈরি হলেও পুঁজিনিবিড় শিল্পে কর্মী সংকোচনও হতে পারে। সব মিলিয়ে হয়তো অবস্থাটা ফলাফলটা এমন হতে পারে—হাতে রইল পেন্সিল।
উপসংহার
সুতরাং, আসন্ন নির্বচনী ময়দানে যুধুমান শাসক দলের কোনো পক্ষকে বিশেষভাবে সমর্থন বা বিরোধিতার কোনো প্রশ্ন উঠছে না। না, আমরা ভোট বয়কটের আওয়াজ তুলছি না; বরং আমাদের সরল স্বীকারোক্তি এবং মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা—এই ভোট-ই আমাদের বয়কট করেছে। আমরা আমাদের ক্ষোভ-প্রতিবাদ-অসহায়ত্ব বড়ো জোর প্রকাশ করতে পারি—‘ওপরের কাউকে পছন্দ নয়’ অর্থাৎ ‘নোটা’ বোতাম টিপে।
তবে, যদি কোনো কেন্দ্রে এমন কোনো প্রার্থী থেকে থাকেন যিনি জনগণের কোনো স্তর বা অংশের দাবি নিয়ে ধারাবাহিক লড়াই চালিয়ে গেছেন এবং এবারের নির্বাচনেও সেই-সব দাবিকে সুসঙ্গতভাবে তুলে ধরছেন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই সেই প্রার্থীকে নির্বাচনী সমর্থন প্রদান করা যেতে পারে।
শেষ করার আগে আবার বলি---সারা দুনিয়ার পুঁজিবাদী দেশসমূহের মতোই এদেশের নির্বাচনেও সমাজের নানা স্তর ও শ্রেণির সমস্যাসমূহ চর্চা-বিতর্কে একদম স্থান পায় না, তা নয়, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শূন্যগর্ভ প্রতিশ্রুতির বাগাড়াম্বরে তা পর্যবসিত হয়। নির্বাচনী প্রচারে বেশিটাই চলে নিজের স্বপক্ষে বড়ো বডো কথা আর মহিমা কীর্তন, আর অন্যের সম্বন্ধে কুৎসা আর মিথ্যা গালমন্দ; চটকদার বিজ্ঞাপনের কুৎসিৎ প্রতিযোগিতা। সব মিলিয়ে ভোটাররা বিভক্ত হয় ব্যক্তি-গ্রহীতা হিসাবে; ব্যক্তিগতভাবে, বড়ো জোর ব্যক্তির সমষ্টিগত যোগফল হিসাবে; আর সেভাবেই ভোটের ফলাফল নিধারিত হয়। এই জনবিরোধী ভোটপর্বে সামিল হবার পাশাপাশি আমাদের এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অগণতান্ত্রিক অন্তর্বস্তুর বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করতে হবে—তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক, দুভাবেই।
পুনশ্চ:
ওপরের লেখাটা শেষ করার পর বিজেপি তার নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করেছে -- তাতে কাশ্মীর সংক্রান্ত তার দুটি বিশেষ ঘোষণা নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। এক, ৩৭০ ধারা বাতিল, যে ধারা কাশ্মীরকে বিশেষ অধিকার প্রদান করেছিল। দুই, ৩৫এ ধারা বাতিল, যে ধারা অনুযায়ী কাশ্মীরে বসবাসকারী না হলে অস্থাবর সম্পত্তি কেনার ওপর, সরকারি চাকরি ও স্কলারশিপ পাবার ওপর নিষেধাজ্ঞা চালু ছিল। কাশ্মীরে ইতিমধ্যে যে বিচ্ছিন্নতার সমস্যা তৈরি হয়েছে, যে সংঘর্ষ ও দমনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, এই দুটি ধারা বাতিল হলে সমস্যা আরও বহুগুণ বেড়ে যাবে। প্রসঙ্গত, গত কয়েক দশকে ৩৭০ ধারার অনেক ইতিবাচক দিক বাতিল করা হয়েছে, যা নিয়ে বিশদ আলোচনার সুযোগ বর্তমান নিবন্ধে নেই। (অবশ্য এই দুটি ধারা বাতিল করার পূর্বশর্ত হল কাশ্মীর বিধানসভায় এবং দেশের লোকসভা-রাজ্যসভা মিলিয়ে বিজেপি-র প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা। যা এখন বহুদূর!)
শেষ খবর
পশ্চিম বঙ্গে বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতা তথা সদ্য-প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরীর সমর্থনে সিপিআইএম নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছে। (যদিও বামফ্রন্টের অন্যতম শরিক আরএসপি সেখানে তাদের প্রার্থীর সপক্ষে প্রচার শুরু করেছে -- বড়দার হুমকি খেয়ে কতদিন এটা সামলাতে পারবে, কে জানে!) এটা সম্ভবত তাদের ‘বিজেপি হারাও’ স্লোগানের সঙ্গতিপূর্ণ পরিণতি ও প্রকাশ। সাবাশ পথ-প্রদর্শক, সাবাশ! ওদিকে তৃণমূল সুপ্রিমো সিপিএম সমর্থকদের কাছে আহ্বান রেখেছেন—সিপিএম-কে ভোট দিয়ে মিছিমিছি বিজেপি-কে হারানোর সুযোগ নষ্ট না করে বরং তারা যেন তৃণমূল-কেই ভোট দেন। চমৎকার! এই না হলে কুশলী রাজনীতিক।
১৪.৪.১৯
Apr 20, 2019
Gautam Sen sengautam1947@gmail.com
Your Comment if any |