banner
bangla-bar

 

“ফ্যাসিস্ত আরএসএস-বিজেপি’র বিরুদ্ধে বাংলা”র তরফে ডাক -
'নো ভোট টু বিজেপি'

১। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ এক সন্ধিক্ষণের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। জনগণের জন্য সব দিক থেকে ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক ও বিপজ্জনক একটি রাজনৈতিক দল বিজেপি এরাজ্যের "দখল" নিতে মরিয়া। সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সারা দেশে ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়ে তারা সংসদের দুই কক্ষ মিলিয়ে প্রায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে দেশের শাসকের আসনে বসেছে। এই সংখ্যাগরিষ্ঠতার ফলে বিজেপি সরকার কর্পোরেট শক্তি ও RSS-এর আজ্ঞাবহ দাস হিসেবে জনবিরোধী সিএএ-এনআরসি-এনপিআর, কৃষি বিল, নয়া শিক্ষা নীতি, নয়া পরিবেশ নীতি, নয়া শ্রম কোড, অরণ্যবাসীর অধিকার হরণ ইত্যাদি আইন লাগু করেছে। নোটবাতিল করে সাধারণ মানুষের আর্থিক ক্ষতি করেছে। রেল সহ সরকারী সংস্থা ও দেশের সম্পদ বেচে দেওয়ার ব্যবস্থা পাকা করেছে। সব রকম ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে ও প্রতিবাদী মানুষদের দানবীয় কানুন ব্যবহার করে জেলে পুরেছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যে ভিন ধর্মে বিবাহ-সম্পর্কিত নারীবিরোধী, মুসলিমবিদ্বেষী আইন, হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থানের আধিপত্যবাদ সহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নিপীড়নকে আইনি রূপ দিচ্ছে।   

২। বিশ্বক্ষুধার সূচকে ভারত ১৯৪টি দেশের মধ্যে ১২৯ স্থানে নেমে গেছে। গুজরাত, উত্তর প্রদেশ সহ সমগ্র দেশ জুড়ে অপুষ্টিজনিত স্টান্টেড শিশুর হার বিশ্বে প্রথম। করোনা ভাইরাসের প্রকোপের পর থেকে অনিয়ন্ত্রিত এয়ারপোর্ট, চার ঘণ্টার নোটিসে অপরিকল্পিত লকডাউন, মানুষের মৃত্যুমিছিল ও মাইগ্রেন্ট শ্রমিকদের ওপর অকথ্য নিপীড়ন হয়েছে। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা যে শুধু মুষ্টিমেয় মানুষের কাজে লাগে ও সাধারণ জনতার জন্য অপ্রতুল, নিষ্ঠুর, ও স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবরাদ্দ নিয়ে সরকার যে কতটা জনবিরোধী তা মানুষের কাছে বে-আব্রু হয়ে গেছে।

৩। শিক্ষা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বল্গাহীন বেসরকারীকরণ করে দেশের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া এবং মিথ্যে প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেশে রেকর্ড বেকারত্ব তৈরি করার কাজ করেছে বিজেপি সরকার।

৪। এ রাজ্যে ২০১৯-এর লোকসভার প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে প্রথমবার প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি ও গত নির্বাচনে এ রাজ্যে ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন নির্বাচনের ফলাফলের দিকে আজ বাংলা তথা দেশ ও বিশ্বের মানুষ তাকিয়ে আছেন। বিজেপি-শাসিত অন্যান্য রাজ্যে তাদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন যত জোরালো হচ্ছে, তত বেশি করে সংসদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা টিকিয়ে রাখতে এ রাজ্যে ক্ষমতা দখল করতে তারা মরিয়া হয়ে উঠছে। এতটাই মরিয়া যে তাদের সর্বভারতীয় সমস্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংগঠনিক ক্ষমতাকে তথা সংঘ পরিবারের সমস্ত ক্ষমতাকে তারা এখানে সমাবেশিত করেছে।

৫৷  মুসোলিনি-হিটলারদের ভারতীয় সংস্করণ হল আরএসএস বা সংঘ-পরিবার। তারা আমাদের দেশকে “রামরাজ্য” বানানোর নামে একটা হিটলারি রাজ কায়েম করতে চায়। বদলে দিতে চায় দেশের সংবিধান। তুলে দিতে চায় চালু সংসদীয় ব্যবস্থা। এমনকি প্রচলিত আইনী কাঠামো ও সামরিক কাঠামোতেও বড় বড় পরিবর্তন ঘটাতে চায়। তুলে দিতে চায় বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে। ভারতের বহুত্বের সমস্ত বৈশিষ্ট্যকে ধ্বংস করে দিয়ে একনায়কত্ব কায়েম করতে এরা উদ্যত। গত কয়েক বছরে ফ্যাসিস্ট বাহিনী এ দেশে মুক্তচিন্তার ফ্যাসিবিরোধী প্রতিবাদী মানুষদের একের পর এক গুপ্তহত্যা করেছে।

৬। আমাদের রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে যে সামাজিক সম্প্রীতির পরিবেশ ছিল যা নিয়ে আমরা গর্ব বোধ করতাম, তা আজকে ভাঙনের মুখে। রাজ্যের একের পর এক এলাকায় পরিকল্পিত ভাবে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ও হিংসার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। মানুষের রুটি-রুজির প্রশ্ন ভুলিয়ে ধর্ম নিয়ে দাঙ্গা বাধিয়ে তাকে ব্যবহার করে গদি দখলের লড়াই চলছে।

৭। বর্তমান রাজ্য-শাসকদলের একাধিক জনবিরোধী ভূমিকা মানুষকে শুধু বীতশ্রদ্ধই করেনি, বিজেপি-র রাজ্যে ক্ষমতা বাড়ানোর পথকেও সুগম করে দিয়েছে। তার সঙ্গে পূর্বতন শাসকদলগুলির বিভিন্ন প্রশ্নে নিষ্ক্রিয়তা তাকে আরও ত্বরাণ্বিত করেছে। এ রাজ্যে বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনকে রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের পক্ষ থেকে "বিরোধী-শূন্য" করার হিংস্র স্বৈরতান্ত্রিক রাজনীতি, নানা সময়ে রাজনৈতিক বিরোধী দলের পরিসর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে খর্ব করা, গণ আন্দোলনকে দমন ও দানবীয় কানুনের ব্যব্যহার, শ্রমিক ধর্মঘট দমন, ও শাসকদলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের দুর্নীতি, রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি না দেওয়া ইত্যাদি কাজের প্রতি এ রাজ্যের মানুষের ন্যায্য ক্ষোভ রয়েছে। এই ক্ষোভকে সুকৌশলে ব্যবহার করেছে ক্ষমতাপিপাসু বিজেপি, এবং মানুষের কাছে নিজেকে "বিকল্প" বলে পেশ করেছে।

৮। উপরে উল্লিখিত ১, ২, ৪, ৫ পয়েন্টের সঙ্গে সঙ্গে আমরা মনে করি যে  বিজেপি-শাসিত রাজ্যে ও কেন্দ্রীয় শাসনের নিরিখে দুর্নীতি, রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, তথাকথিত "উন্নয়ন মডেল" ও শ্রমিক-কৃষক নিপীড়ন - সমস্ত ক্ষেত্রেই জনবিরোধিতার মাপকাঠিতে বিজেপি-র ট্র্যাক রেকর্ড ভারতের আর যে কোনও রাজনৈতিক দলের থেকেও অনেক অনেকগুণ ভয়ানক। আরএসএস ও বিজেপি বাংলা তথা কোনও রাজ্যে বা কেন্দ্রেই "বিকল্প" তো নয়ই, বরং, বিজেপি-আরএসএস প্রকৃত অর্থেই -- অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভাবে, সব দিক থেকেই -- দেশের ৯৯% জনগণের শত্রু।

এই মঞ্চ ও আশু কর্মসূচী সম্পর্কে

পশ্চিমবঙ্গে এই ফ্যাসিস্ত শক্তির আগ্রাসনকে রুখে দিতে ও এর বিরুদ্ধে রাস্তা থেকে ব্যালট-বাক্স সর্বত্র একটি কার্যকরী গণ-প্রতিরোধ গড়ে তলার লক্ষ্যে এরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা গণ আন্দোলনের কর্মী ও ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল ও প্রতিবাদী নাগরিকদের একটি মঞ্চ গঠিত হয়েছে ৪ঠা জানুয়ারি ২০২১ তারিখে। এই মঞ্চের নাম 'ফ্যাসিস্ট আরএসএস-বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা'। এই মঞ্চ মনে করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রশ্নে দীর্ঘস্থায়ী গণ আন্দোলন ও সামাজিক নির্মাণের কাজই পারে ফ্যাসিবাদের উত্থানকে প্রতিরোধ করতে। তাই এই মঞ্চ বাংলার সাধারণ মানুষকে পাশে নিয়ে আশু উদ্যোগ তথা দীর্ঘমেয়াদি গণ আন্দোলনের উদ্যোগের মধ্যে দিয়ে ফ্যাসিবিরোধী গণ-প্রতিরোধ গড়ে তোলার সংকল্প নিয়েছে। বাংলার যে কোনও মানুষ সহমতের ভিত্তিতে এই মঞ্চের সদস্য হতে পারবেন।

আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এই মঞ্চের তরফ থেকে যে ক্যাম্পেন গ্রহণ করা হয়েছে তার মূল স্লোগান 'নো ভোট টু বিজেপি' (#NoVoteToBJP) বা 'বিজেপি-কে একটিও ভোট নয়'। এর পাশাপাশি এই মঞ্চ মানুষের দাবিসনদ সংকলিত করে মানুষের কাছে এই প্রচার নিয়ে যাবে যাতে মানুষ তার মৌলিক দাবির কথা মাথায় রেখে সুচিন্তিত ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেন। এই দাবিসনদে এ পর্যন্ত যা যা দাবি আমরা সংকলন করেছি তা এই প্রেস নোটের সঙ্গে সংযোজিত করা হল।

'নো ভোট টু বিজেপি' স্লোগান নিয়ে জেলায় জেলায় প্রচার আন্দোলন শুরু হচ্ছে। আগামী ১০ মার্চ, ২০২১-এ আমরা ওপরের স্লোগানটিকে সামনে রেখে এক বৃহৎ জমায়েত ও মহামিছিল কর্মসূচি গ্রহণ করতে চলেছি।

আগামী ১৩ই জানুয়ারি কর্পোরেট-বিরোধী কৃষক আন্দোলনের সংহতিতে মঞ্চের পক্ষ থেকে মৌলালির মোড়ে, দুপুর ২টো থেকে আমরা একটি অবস্থান কর্মসুচী নিতে চলেছি।

আমরা আশা রাখি আপনারা সকলে আমাদের এই বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন এবং ভবিষ্যতেও আমাদের এই আন্দোলনের দিকে নজর রাখবেন।

ধন্যবাদ সহ
আহ্বায়কমন্ডলী
ফ্যাসিস্ত RSS-BJPর বিরুদ্ধে বাংলা

মানুষের দাবীসনদ

১। CAA 1986, 2003, 2019 বাতিল করতে হবে। NPR, NRC  সংক্রান্ত যাবতীয় প্রকল্প বাতিল করতে হবে। কোনও দেশবাসীর নাগরিকত্ব বা নাগরিক অধিকার নিয়ে সামাজিক বা প্রশাসনিক হয়রানি করা যাবে না।
২। কৃষকস্বার্থবিরোধী নতুন তিন কৃষি আইন বাতিল করতে হবে। এর বিরুদ্ধে রাজ্যের নিজস্ব আইন বানানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ফসলের ন্যূনতম সংরক্ষণ মূল্যকে আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে।
৩। শ্রমজীবীদের স্বার্থবিরোধী নয়া লেবার কোড বাতিল করতে হবে।
৪। ধর্ম এবং জাতপাতের নামে শ্রমজীবী-আদিবাসী-দলিত-সংখ্যালঘু সহ সমস্ত নাগরিকের প্রতি বৈষম্য, আক্রমণ ও তাঁদের উচ্ছেদের অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে।
৫। রেল সহ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ও জনতার সম্পদ আম্বানি-আদানি সহ বড় পুঁজিপতিদের কাছে দেশ বেচে দেওয়া যাবে না।
৬। শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ উপযুক্ত পরিমাণ বাড়াতে হবে। 'সকলের জন্য স্বাস্থ্য' নীতিকে প্রকৃতভাবে কার্যকর করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে জিডিপি-র ন্যূনতম ৪% বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।
৭। নয়া শিক্ষা নীতি বাতিল করতে হবে। NEET বাতিল করতে হবে।
৮। উন্নয়ন বা রাষ্ট্রীয় স্বার্থের নাম করে আদিবাসী-অরণ্যবাসীদের উচ্ছেদ করা যাবে না।
৯। রাজ্যে রাজ্যে "লাভ জিহাদ" অর্ডিন্যান্স অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
১০। UAPA, NIA, NSA, AFSPA সহ সমস্ত দানবীয় আইন বাতিল করতে হবে।
১১। পশ্চিমবঙ্গ সহ সমস্ত দেশে রাজনৈতিক বন্দীদের নিঃশর্তে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
১২। কৃষক-শ্রমিক সহ সমস্ত শ্রমজীবী মানুষের সম্মানের সঙ্গে বাঁচার উপযুক্ত সামাজিক নিরাপত্তা দিতে হবে।
১৩। রাজ্যের সাংবিধানিক ক্ষমতার ওপর কেন্দ্রের আক্রমণ বন্ধ করতে হবে।
১৪। সংবিধান স্বীকৃত সমস্ত নাগরিক অধিকার তথা গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবাধিকারের উপর রাষ্ট্রীয় আক্রমণ বন্ধ করতে হবে।
১৫। দেশি ও বিদেশি পুঁজিপতিদের স্বার্থে পরিবেশের ওপর রাষ্ট্রীয় আক্রমণ বন্ধ করতে হবে।
১৬। সমস্ত কর্মক্ষম মানুষের জন্য স্থায়ী কাজ ও ন্যায্য মজুরির দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।

৬/১/২০২১

Back to Home Page

Frontier
Jan 7, 2021


Your Comment if any